রবিঠাকুর পরিচিতি

সবাইকে নমস্কার।



আমি শান্তিনিকেতনে জন্মিত এক সুদূর কানাডা বাসী বিশ্বনাগরিক যে মনে করি আমার সর্বজনীন সচেতনতাতে বাবা মাকে বাদ দিলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব আছে রবীন্দ্রনাথের বিশ্বমানবতাবাদের। আমার দাদামশাই কালীমোহন ঘোষ সতেরো-আঠার বছর বয়স থেকে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কর্মযুক্ত হন প্রধানতঃ পল্লী উন্নয়নের কাজে, প্রথমে বর্তমান বাংলাদেশে শিলাইদহ ও পতিসরে এবং পরজীবনে নিশান্তিনিকেতন-শ্রীনিকেতনে এসে এল্মহার্ষ্ট সাহেবের সঙ্গে। তার পুত্র এবং আমার বড়মামা শান্তিদেব সঙ্গীতভবনে ছিলেন। আমার বাবা কলাভবনের অধ্যাপক ও মা শিল্পসদনে কাজ করেছেন।
আমি অনেক বছর আগে ২০০৯’এ অনেক নথিপত্র ঘেঁটে এবং বিশেষ করে প্রশান্ত পালের রবিজীবনী অবলম্বন করে, তেইশ স্তবকের একটি কবিগান রচনা করি, রবীন্দ্রনাথের বারো পুরুষের বংশতালিকার পরিচয় দিয়ে।

কবিগান করার পেছনে কয়েকটি উদ্দেশ্য ছিল – প্রথমত, কবিগান আজ বাংলা থেকে অনেকটা উঠে গেছে। শহরের লোকেরা একে ভুলে গেছে এবং গ্রাম গঞ্জে হিন্দি সিনেমা, আর টেলিভিশন ঢুকে গিয়ে কবিগাননকে ঠেলে প্রায় নির্বাসনে পাঠিয়েছে। সুতরাং যদি আমার ক্ষুদ্র ক্ষমতায় লুপ্তপ্রায় বাংলা কবিগানে আবার একটু প্রাণ সঞ্চার করা যায় তবে সেটা ভাল চেষ্টা হবে মনে করে। আর দ্বিতীয় কারণ ছিল – যারা পড়া লেখা জানেনা বা বই পড়ার সময় পায়না, বা ছোট শিশু, এরাও কবিগান মারফত নানা তথ্য জেনে মনে রাখতে পারে -যা কবিগানের অন্যতম প্রধান গুন। সুতরাং এর মধ্য দিয়ে গ্রাম গঞ্জের মানুষ রবি ঠাকুরের পূর্বপুরুষরা কিরকম লোক ছিলেন, কোথা থেকে এসেছেন এবং কেমন করে তিনি শান্তিনিকেতনে পৌঁছলেন, তাও জানতে পারবে।

যাই হোক, এই কবিগানে দুচারজন সুর দেবার চেষ্টা করলেও পুরোটা করা সম্ভব হয়নি – যদিও অনেকে সাহাজ্য করতে এগিয়ে এসেছিল। বাংলাদেশের কিছু লোক এটা নিয়ে গিয়ে বলেছিল ওখানে চেষ্টা করবে বলে, তারও কোনও ফল এখনও আসেনি। আমি সুরকার নই, গায়কও নই – নয়তো নিজেই চেষ্টা করতাম।
 
আজ এখানে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম। হয়তো কারুর ভাল লাগবে।
কেমন লাগলো জানাবেন।
 
শান্তনু মিত্র

পাঠভবনের প্রাক্তন ছাত্র, বিশ্বজিত রায়ের পুত্র, বাঙ্গালুরু বাসী তমোজিত রায় (টুকুল) কবিগানটির প্রথম অংশটিতে সুর প্রয়োগ করে গেয়েছিল, সেটা এখানে তোলা হল। কবিগানে সুর রচনার একটা সমস্যা হল যে এতে অনেক স্তবক থাকে বলে একই সুরে পুরোটা গাইলে সেটা একঘেয়ে, repetitive হয়ে যায়, কবিগান কিছুটা রস হারায়। তাই কবিগান রচনায় সুরের ও গাওয়ার রচনাশৈলীতে নানা রকম পরিবর্তন, বৈচিত্র আনতে হয়। সেই কথা মনে রেখে টুকুল প্রথম অংশটাই শুধু সূর করে গেয়েছিল।

শুনুন