খোলা হাওয়ার সন্ধানে

রাণা প্রতাপকে,

আমি তাড়াতাড়ি কতগুলো কথা বলেদিই তোমাদের, রাণাপ্রতাপ। আমি ফেসবুক মোটামুটি বর্জন করেছি, যদিও আমার এখানে পাঁচ হাজার বন্ধু এবং কয়েক হাজার ফলোয়ার। আমাকে Facebook সারাক্ষণ সাবধান করছে যে আমার দরকার কিছু বন্ধুদের ছাঁটাই করে জায়গা বানাতে – নতুন বন্ধুদের আসার গেট খোলা রাখতে, কারণ ফেসবুক পাঁচ হাজারের বেশি বন্ধু মঁজুর করেনা। আগে আমি দিনে দশটা পোষ্ট করতাম এখানে নিজের দেওয়ালে – আজকাল তিনচার দিনে একটা করি। আমার YouTube’এ ৬০০  টা ভিডিও আছে এবং কয়েক হাজার ফলোয়ার ছিল। তা সত্বেও আমি দেড় বছরে একটাও ভিডিও তুলিনি ওখানে। কারণ আমি YouTube’কেও বয়কট করছি – বন্ধু বা ফলোয়ার থাক না থাক। আমি এখন বাইরের জগতবাসী – আমাকে পেতে গেলে, বা আমার  মত আরও অনেককে জানতে গেলে – এই jail’এর বাইরে বেরোতে শিখতে হবে।

আমার সঙ্গে তোমাদের যোগায়োগ রাখার কোনও প্রয়োজন নেই – কিন্তু যদি কোনও কারণে সম্পর্ক রাখতে চায় কেউ তবে এই ফেসবুক এবং ইউ-টিউবের নিয়ন্ত্রিত ভিড় ছেড়ে মাঝে মধ্যে বাইরের জগতে খোলা হাওয়ায় নি:শ্বাস নেওয়া অভ্যেস করতে হবে। এখানের বাইরেও যে একটা জগত আছে, তা দেখতে হবে, জানতে হবে। সেখানের বাসিন্দারাও কি মানুষ এবং কেন তারা এই ফেসবুকের মত নিয়ন্ত্রিত সুরক্ষিত সংগঠিত নির্মিত সীমাবদ্ধ জগত ছেড়ে বাইরের অনিয়ন্ত্রিত প্রাকৃতিক অরণ্যে, বনে বাঁদাড়ে ঘোরাঘুরি করছে, তার অনুসন্ধান করতে হবে।

আমি ফেসবুক, ‍ইউটিউব, টুইটার, ইনষ্টাগ্রাম ইত্যাদি পপুলার পল্যাটফর্ম এড়াচ্ছি আমার বাক স্বাধীনতাকে বাঁচিয়ে রাখতে। ফেসবুকে তোমার সব কিছু সমালোচনা করার অধিকার আছে – তুমি ভারতবর্ষকে, গান্ধীকে, সুভাস বোসকে, এমন কি রাম, লক্ষণ যিশু খৃষ্ট, ক্যাপিটালিজম, সোশালিজম, আকাশ পাতাল, ভগবান, শয়তান – সব কিছুকে ইচ্ছে মত সমালেচনা করতে পারবে – কেবল একটি বিষয় ছাড়া।

শুধু তুমি world health organisation, এবং তাদের প্রচারিত কোভিড কাহিনীকে, তার বিজ্ঞানকে, তার টিকা নিয়ে জোরাজুরিকে সমালেচনা করতে পারবে না। যদি তাদের সমালেচনা করা শুরু করো তখনই ওরা তোমার কমেণ্টে warning post লাগাবে, বা তোমাকে কিছু দিনের জন্য ফেসবুকে লিখতে দেবেনা, ফেসবুক jailয়ে পাঠাবে। ইউ টিউব তোমার সেই কোভিড-সমালোচনা-কাহিনীকে ডিলিট করবে। ভাড়াবাড়ি করলে তোমাকে পুরোপুরি তাড়াবে ‍ তোমার অ্যাকাউণ্ট িলিট করে দেবে। তোমাকে নতুন নামে ছদ্মবেশ আবার ঢোকার চেষ্টা করতে হবে।

এই জন্য, আমার মত অনেক লোক বাক স্বাধীনতার মূল্য বোঝে, তারা এই বেড়ির বাইরে সময় কাটাতে শিখছে – ওখানের মানুষদের সঙ্গে বসে আলাপ আলেচনা করতে শিখছে। আমি তাদের সঙ্গে সময় কাটানোটা খুব পছন্দ করি। আমার সোশাল মিডিয়ার গজত এখন মোটামুটি ওখানেই। রবীন্দ্রনাথের একটা গান এখানে দিলাম – প্রাসঙ্গিকতার জন্যঃ

—-

তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে
টুকরো করে কাছি, আমি ডুবতে রাজি আছি
সকাল আমার গেল মিছে
বিকেল যে যায় তারি পিছে ;
রেখো না আর, বেঁধো না আর, এই কূলের কাছাকাছি।
আমি ডুবতে রাজি আছি।
 
মাঝির লাগি আছি জাগি, সকল রাত্রিবেলা,
ঢেউগুলো যে আমায় নিয়ে করে কেবল খেলা।
ঝড়কে আমি করব মিতে
ডরব না তার ভ্রূকুটিতে ;
দাও ছেড়ে দাও ওগো, আমি তুফান পেলে বাঁচি।
আমি ডুবতে রাজি আছি।
—-

রবীন্দ্রনাথের তখনকার রাজনৈতিক পরাধীনতার ও সামাজিক সীমাবদ্ধতার সুসংগঠিত গণ্ডীর নিরাপদ শান্ত সুপরিকল্পিত জগতে থেকে নিজেকে দম বন্ধ লাগতো,  তাই এই অবরুদ্ধতার থেকে বেরোবার আশায় লিখেছিলেন ‍ ভগবান যেন তাঁকে আর এই দম আটকানো নিরাপদ কিনারায় না বেঁধে রেখে তাঁকে মুক্তি যেন দেয়, যাতে তিনি তাঁর ভাঙ্গা তরীতে পাল তুলে সেই খোলা হাওয়ায় খোলা সমুদ্রের ঢেউয়ে দুলতে পারেন। তুফান আসে – আসুক। তরী উল্টে যায় – যাক। এই সীমাবদ্ধতার থেকে মুক্তি পেতে, সেই খোলা হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে পারলে, বিনিময়ে তিনি ডুবে মরতে ওবদি রাজি ছিলেন।

আজ আমরা সেই খোলা হাওয়ার সন্ধানে বেরিয়েছি, এবং একবার সেই মুক্ত আকাশের নিচে নিঃশ্বাস নিয়ে সেই লাগাম ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত জগতকে দেখে আর এই ফেসবুকিস্থানে থাকতে ভাল লাগেনা। তাতে যদি ডুবতেও হয়, তাও গ্রহণীয়।

শেষে আরেক বাঙালির কথা সংযুক্ত করলাম এখানে – এটা আমি শুনি ঔ বাইরের খোলা জগতে। এটা কে বলেছিল তার নাম উল্লেখিত ছিল না- তা জানার উৎসাহ দেখাতে বাংলারই স্বাধীনচেতা নবযুবকরা, যারা এই সীমাবদ্ধ জগতে চোখের আড়ালে হাজারে হাজারে বাইরে বেরিয়ে এসেছে – তারা জানালো আমাকে, যে এটা নাকি রামকৃষ্ণ মিশনের এক জয়দীপ মহারাজ বলেছেন। আমি জয়দীপ মহারাজোর নামই শুনিনি আগে – কিন্তু ওনার কথা শুনে বুঝলাম, শ্বাধীন চিন্তা করার ক্ষমতা এবং কোভিডের পেছনের মহা ষড়যন্ত্রকে সাধারণ লোককে ঠাণ্ডা গলায় কি করে বোঝাতে হয় তিনি জানেন। পারলে এটা শুনো।

আমাকে এখানে বেশি ডেকোনা – আমি ফেসবুকিস্থানের নারগিকত্ব ছেড়েছি – দূরত্ব বাড়াচ্ছি এখান থেকে। তোমরা সবাই ভাল থেকো।

জয়দীপ মহারাজ – কোভিড হাহিনী